.

প্রিয় কবি

অঞ্জন সরকার জিমি অমিত চক্রবর্তী অমিতাভ দাশ গুপ্ত অশোক দেব আন্দালীব আবিদ আজাদ আবুল হাসান আল মাহমুদ আলতাফ হোসেন আহসান হাবীব খোন্দকার আশরাফ হোসেন জয় গোস্বামী জীবনানন্দ দাশ টোকন ঠাকুর তানিম কবির দীপন চক্রবর্তী নবনীতা দেবসেন নির্মলেন্দু গুন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী পূর্ণেন্দু পত্রী ফয়সল রাব্বি ফারাহ সাঈদ বিনয় মজুমদার বুদ্ধদেব বসু ব্রাত্য রাইসু ভাস্কর চক্রবর্তী মজনু শাহ মন্দাক্রান্তা সেন মহাদেব সাহা মাসুদ খান মুহাম্মদ মরিয়ম মৌ ভট্টাচার্য রণজিৎ দাশ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রিফাত হাসান রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ শক্তি চট্টোপাধ্যায় শঙ্খ ঘোষ শহীদ কাদরী শোয়েব শাদাব শ্বেতা চক্রবর্তী সমর সেন সমুদ্র গুপ্ত সরকার আমিন সাইয়েদ জামিল সিকদার আমিনুল হক সুকান্ত ভট্টাচার্য সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সুনীল সাইফুল্লাহ সুবোধ সরকার সুমন রহমান হুমায়ুন আজাদ হুমায়ূন আহমেদ হেলাল হাফিজ

ছোটখালার যাওয়া

ছোটখালার যাওয়া

সুমন রহমান


ছোটখালার মনে নেই, ওকে আমি পালিয়ে যেতে বলেছিলাম
বলেছিলাম, এসো, লুকিয়ে থাকি শূন্য ফুলদানির
অন্তহীন রহস্যের ভেতর,
মরণশীল দুটো মাছরাঙার সাথে জীবন বদলাই আর
হাওড়ের মধ্যে ডাকাতের মত তাড়া করি ঘূর্ণায়মান প্রপেলারকে

এ-কথা শুনে ওর সূঁচ-ধরা হাত গেল থেমে। ওর চোখ
হয়ে ওঠল মেঘাচ্ছন্ন দিনের জোড়াপুকুরের চেয়েও সন্ত্রস্ত
সূচিকর্ম ওর প্রিয়। মাছরাঙাদের সমাজে সেলাইয়ের প্রচলন নেই জেনে
কী হাসি তার!
যেন আমার প্রস্তাব বাতিল হয়ে গেছে
সুপারি গাছদের বিশেষ বর্ধিত সভায় 

ওর ব্যস্ততা ছিল। ভিনদেশী এক রাজকুমারের ঘুমের জন্য
বালিশের ওয়াড়গুলোকে কথা বলতে শেখানোর কাজ, তাই সারাদিন
নিজ আঙুলের সৌন্দর্যে নিজেই সে মুগ্ধ হয়ে থাকত
আমার কথা শুনত কি শুনত না -- বৃষ্টি ধরে এলে
আমি শূন্য ফুলদানির ভেতর একা ঘুমিয়ে পড়তাম
ঘুমিয়ে ভাবতাম
প্রপেলার-পাখার অন্তহীন হিমেল নৈঃসঙ্গের কথা

সেই রাজকুমারের ওপর আমার ছিল অসামান্য ক্রোধ
তাকে আমি খুঁজে বেড়াতাম সত্যিকারের টিনের তলোয়ার নিয়ে
ধ্বসিয়ে দিতাম যাবতীয় উঁইয়ের ঢিবি, তার ঘোড়াটিকে
ধাওয়া করবার জন্য
ভাব রাখতাম দ্রুতগামী বাছুরদের সাথে

একদিন আমার আয়ত্বে এল রূপকের ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতা
অনুনয় করে বললাম, খালা, চল বোয়ালমারির বিলে
নিশুতি রাতে তুমি জেলেডিঙি হয়ে ঘুরে বেড়াবে, আর আমি
হ্যাজাক-হারিকেন
কিংবা চলো দূরে, যেখানে তুমি এক বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত, আমি এক
উলুঝুলু কাকতাড়ুয়া
নয় আরো দূরে, তুমি পোড়োবাড়ি আর আমি টিনের সেপাই!

সূঁচের কাজ শেষ হলে ছোটখালার জন্য পালকি এল
এল অঘোর শ্রাবণ, আমার চোখ পোড়োবাড়ির জানালা
আমি কাকতাড়ুয়া, আমি টিনের সেপাই, আমি হ্যাজাক-হারিকেন
বর্ষণসিক্ত বাঁধে ওঠে অনেকক্ষণ ধরে হাত নাড়লাম
ছোটখালার যাওয়া তবু ফুরাল না, চলে যাচ্ছে সে
নিসর্গের সেলাই খুলে হারিয়ে যাওয়া জেলেডিঙির মত।