.

প্রিয় কবি

অঞ্জন সরকার জিমি অমিত চক্রবর্তী অমিতাভ দাশ গুপ্ত অশোক দেব আন্দালীব আবিদ আজাদ আবুল হাসান আল মাহমুদ আলতাফ হোসেন আহসান হাবীব খোন্দকার আশরাফ হোসেন জয় গোস্বামী জীবনানন্দ দাশ টোকন ঠাকুর তানিম কবির দীপন চক্রবর্তী নবনীতা দেবসেন নির্মলেন্দু গুন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী পূর্ণেন্দু পত্রী ফয়সল রাব্বি ফারাহ সাঈদ বিনয় মজুমদার বুদ্ধদেব বসু ব্রাত্য রাইসু ভাস্কর চক্রবর্তী মজনু শাহ মন্দাক্রান্তা সেন মহাদেব সাহা মাসুদ খান মুহাম্মদ মরিয়ম মৌ ভট্টাচার্য রণজিৎ দাশ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রিফাত হাসান রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ শক্তি চট্টোপাধ্যায় শঙ্খ ঘোষ শহীদ কাদরী শোয়েব শাদাব শ্বেতা চক্রবর্তী সমর সেন সমুদ্র গুপ্ত সরকার আমিন সাইয়েদ জামিল সিকদার আমিনুল হক সুকান্ত ভট্টাচার্য সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সুনীল সাইফুল্লাহ সুবোধ সরকার সুমন রহমান হুমায়ুন আজাদ হুমায়ূন আহমেদ হেলাল হাফিজ

নগর পুড়লে বান্র্ট সিয়েনা, মন পুড়লে ভার্মিলিয়ন রেড

নগর পুড়লে বান্র্ট সিয়েনা, মন পুড়লে ভার্মিলিয়ন রেড
টোকন ঠাকুর

রাত্রে লিপিত ভাষা, যখন পড়ছি, তখন হয়ত দিন!
যুদ্ধে আমি সম্পূর্ণ প্রস্তুত, মন আমার সাবমেরিন! সাবমেরিন!!

এই যুদ্ধ কবেকার?--সেই স্মৃতি বিস্মরণে কবেই উধাও
সমস্ত কবিতা পুড়ে ছাই হয়ে গেল, সে-আগুন, সে-আমার নিয়তি, দাউ দাউ...

আমি এক রৌদ্রকরোজ্জ্বল গল্পের পাশে জেগে উঠে ভোর দেখছিলাম!
ভোর আমাকে দোর খুলে বাইরে নিয়ে গেল, 
ভোর আমাকে এক উন্মুক্ত ট্রাফিক দ্বীপের উপরে দাঁড় করিয়ে দুপুর দেখাল...
আমি দেখলাম, নিজের ছায়ার উপরে দাঁড়িয়ে থাকাই দুপুর
নিজেকে নির্দেশ করাই দুপুর
কোনোদিকে ঝুঁকে না পড়বার নামই দুপুর
দুপুরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার নামও শ্রী দগ্ধ দুপুর...

আমার রাতে লেখা কবিতা আমি পরদিন দুপুরে পুড়িয়ে ফেলি
আমার রাত্রিভাষার অভিধান পরদিন দুপুরেই ছাই হয়ে যায়
আমার রাত্রিচরিত চিঠি, সেই চিঠি পরদিন শ্মশানে পৌঁছে যায়
আমি পরিবেশবাদিদের কাছে রেখে যাচ্ছি ছাইশিল্পের ক্ষতি ও সম্ভাবনা
আমি, যতগুলো দিন আসে ততবারই আমাকে পোড়াই

কেন? যদি কোনো পোড়া-পোড়া গান ভেসে আসে!
যদি কোনো পুড়ে যাওয়া প্রণয়ের মর্ম খুঁজে পাই!!
যদি কোনো পোড়ামনপাহাড়ের আত্মকাহিনি লেখা যায়!!!

কেননা, আমার অভিপ্রায় আমি কত আগেই জানিয়ে দিয়েছি
সেই এক সময়-সন্ধির কাছে, যখন আমি কামারশালার কয়লার 
ধর্মান্তরিত ছাইজন্ম মুখস্থ করে নিয়েছিলাম
আমি লোহাকে লাল হয়ে গলে যেতে দেখেছিলাম
একদিন, শাস্ত্রপাঠ্যে এক গ্রন্থকীট হয়ে নীতিকথা খেয়ে ফেলেছিলাম
আমার অভিপ্রায় ছিল সময়ের খুব মুখোমুখি বসে কথা বলা...
কিন্তু সে কথা কি বলতে পেরেছি?
যে-কথারা নি:শব্দে খুঁজে চলেছে সেই ছিমছাম মাধুরীশহর
উজ্জজয়নীপুর কতদূর!
যে-কথারা আহত হয়ে ছুটে চলেছে শরণার্থী শিবিরের দিকে
যে-কথারা পরিযায়ী এক জীবনের অভিজ্ঞানপ্রাপ্ত...

যে-কথারা আমাকে অনিদ্র রেখে বহু বহুরাত আর ঘরেই ফেরেনি
যে-কথারা নিশ্চিত জানে, নদীপাড়ের কাশফুল কখনো আলোকচিত্রে দোলে না_
সে-কথা কি কথা নয়? সে-কথা কি বিস্তীর্ণ আকাশ-ধারণা নিয়ে
আমারই চোখের মধ্যে অসতর্কে ফুটে ওঠে না কখনো?


অন্তত এইটুকু তথ্য এক বধুয়াকাতর বৃক্ষ আমাকে অনেক আগেই দিয়েছে যে
বনাঞ্চলের মধ্যে কোথাও পঙ্খিনী আছেই
শুধু তাকে খুঁজতে খুঁজতে উড়ে বেড়াবার ডানা থাকতে হবে_

কিন্তু আমার তো ডানা নেই, আমি এক শ্রীদগ্ধ দুপুর
দুপুর মানেই নিজের ছায়ার উপরে দাঁড়িয়ে থাকা উন্মাদ
উন্মাদের কথাগুলোই বান্র্ট সিয়েনা, খুঁজে চলেছে ছিমছাম সবুজ তরুণীশহর
আহত হয়ে ছুটে চলেছে শরণার্থী শিবিরের দিকে...পরিযায়ী অভিজ্ঞানে
উন্মাদের নি:শ্বাসই পোড়া, ভার্মিলিয়ন রেড...পরিযায়ী অভিজ্ঞানে

নিশ্চয়ই সেই শহর কোথাও আছে, যেখানে বিকেল হঠাৎ শাড়ি পরে বাইরে বেরোয়
নিশ্চয়ই সেই গৃহব্যবস্থা কোথাও আছে, যেখানে ঘুম এক নারীর মহিমা নিয়ে 
সুহাসিনী, অপেক্ষা করছে
সত্যি সত্যি কাশফুল নদীপাড়ে পারফর্ম করছে; সেই সিকোয়েন্সে
দিগন্তরেখার কাছে নীলিমা-পরিভ্রমণের সিগন্যাল ফুটে উঠছে

নিশ্চয়ই সেই স্বপ্নফ্যাক্টরি কোথাও আছে, মে-দিবসেও যেখানে শ্রমিকের ছুটি মেলে না
না মিলুক, সে তার নিজের জন্যে হলেও স্বপ্ন তৈরি করে যাবে
স্বপ্নসম্পন্ন এক বাস্তবতার সাঁকোর ওপর দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করবে

ওপারে অপেক্ষা করছে সুহাসিনী, সেই অধরা শহরের ইল্যুশন
আমি ইল্যুশনের কাছে গিয়ে বলব: বর্ষার মেঘ যদি রবীন্দ্রনাথের, কালিদাসের
হেমন্তের আলপথ যদি নির্জন দাশের, তাহলে তুমিই আমার মৃগয়া, বনভূমিকার বউ
আমি তোমার জন্যেই যুদ্ধ করছি, কবিতা পুড়িয়ে ছাই করছি
পোড়ামন পাহাড়ের ধারাবিবরণী লিখছি...

ছাইশিল্পের মধ্যে আমার অভিপ্রায় আত্মমগ্নতার নৈশলিপি ছড়িয়ে রাখছে...

এই লেখা যখন কেউ পড়বে, তখনো আমি যুদ্ধে থাকব, যদিও
আমাকে যতই দেখাক উদাসীন_
গভীর উদ্দেশ্যে পাঠানো মন আমার সাবমেরিন, সাবমেরিন...