.

প্রিয় কবি

অঞ্জন সরকার জিমি অমিত চক্রবর্তী অমিতাভ দাশ গুপ্ত অশোক দেব আন্দালীব আবিদ আজাদ আবুল হাসান আল মাহমুদ আলতাফ হোসেন আহসান হাবীব খোন্দকার আশরাফ হোসেন জয় গোস্বামী জীবনানন্দ দাশ টোকন ঠাকুর তানিম কবির দীপন চক্রবর্তী নবনীতা দেবসেন নির্মলেন্দু গুন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী পূর্ণেন্দু পত্রী ফয়সল রাব্বি ফারাহ সাঈদ বিনয় মজুমদার বুদ্ধদেব বসু ব্রাত্য রাইসু ভাস্কর চক্রবর্তী মজনু শাহ মন্দাক্রান্তা সেন মহাদেব সাহা মাসুদ খান মুহাম্মদ মরিয়ম মৌ ভট্টাচার্য রণজিৎ দাশ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রিফাত হাসান রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ শক্তি চট্টোপাধ্যায় শঙ্খ ঘোষ শহীদ কাদরী শোয়েব শাদাব শ্বেতা চক্রবর্তী সমর সেন সমুদ্র গুপ্ত সরকার আমিন সাইয়েদ জামিল সিকদার আমিনুল হক সুকান্ত ভট্টাচার্য সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সুনীল সাইফুল্লাহ সুবোধ সরকার সুমন রহমান হুমায়ুন আজাদ হুমায়ূন আহমেদ হেলাল হাফিজ

নন্দ'র মা

(লেনন-এর 'ইমাজিন' প্রথম কবে শুনেছিলাম মনে নেই। কতটুক বুঝে শুনেছিলাম তাও মনে নেই। এরপরে হয়তো আরো অনেকবার এই গান শুনেছি, বুঝেছি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আরো অনেক কিছু বুঝেশুনে দিনে দিনে প্র্যাক্টিক্যাল হয়ে উঠছি। কিন্তু, এখনো 'ইমাজিন' শুনলে আমার চামড়ার নিচে কেমন জানি একটা শিহরন হয়, গুজবাম্প হয়। মনে হয়- আহা, সত্যি যদি এমন হতো!  আমার জানলা দিয়ে যদি দেখা যেত ইসলামাবাদ, প্যারিস কিংবা এল্যাবামা। কাঁটাতার পেরিয়ে হারিয়ে যাওয়া মানুষের জীবন আমাকে পীড়া দেয়। সারাজীবনের জন্য একটা নদী বা প্রান্তর হারানো মানুষের ব্যাথা আমাকে পীড়া দেয়। মহীনের ঘোড়াগুলি'র রাবেয়া, রুখসানা নিয়ত আমার মন খারাপ করে। ঋত্বিকের নীতা আমাকে গভীরে ভাবায়। সম্প্রতি এই লিস্টে যুক্ত হয়েছে- নন্দ'র মা। জয় গোস্বামী'র অনবদ্য এক চরিত্র। ঋতুপর্ণ ঘোষের সিনেমায় এই কবিতাটা'র রেনডিশন অভিনব)   
   

 নন্দ'র মা
- জয় গোস্বামী




সেই কোন দেশে আমরা যাচ্ছিলাম
কোন দেশ ছেড়ে আমরা যাচ্ছিলাম
পেরিয়ে পেরিয়ে উঁচু-নীচু ঢালু মাঠ
শিশির ভেজানো কাঁটাতার, গাছপালা
আলপথে নেমে আমরা যাচ্ছিলাম
ধানখেত ভেঙে আমরা যাচ্ছিলাম
ছোটবোন আর মা-বাবা, গ্রামের লোক
তার পাশে আমি দুলালী না প্রিয়বালা?

বাবা-মা'র ডাক বাড়িতে দুলালী বলে
প্রিয়বালা নাম দিয়েছিল পাঠাশালা
দু’তিন ক্লাসের লেখা-পড়া সবে শুরু
গ্রামে কে বলল পালারে সবাই পালা
সারা গ্রাম নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলাম
মা-বাবা দু’বোন পালিয়ে যাচ্ছিলাম
ঝোঁপঝাড় ঠেলে, হাজামজা নদী ঠেলে
পথে ঘুমন্ত দাঁড়িয়ে ঘরের চালা
ঘুমন্ত বেড়া চালে ঘুমন্ত লাউ
উঠোনে শোয়ানো গরুর গাড়ির চাকা
শোয়ানো লাঙ্গল, দাওয়ায় শিউলি গাছ
ঘোড়া নিমগাছে চাঁদ অর্ধেক ঢাকা
শব্দ না করে চলে যাই তবু ডাল 
নিচু হয়ে এসে ছুঁয়েছে কপাল, মাথা 
শিশিরে ঠান্ডা, ভেজা আর খসখসে
হাতের পাতার মতনই গাছের পাতা
কত কত মাঠ পার হয়ে তারপর
জিরিয়ে নিয়েছি গাছের-ই তলায় বসে
যে যার পোটলা খুলে চিড়ে, গুড়, মুড়ি
শেষে চোখ লেগে এসেছে ক্লান্তি দোষে।

আচমকা দেখি ছুটোছুটি করে লোক
কিভাবে আগুন লেগে গেছে গ্রামে গ্রামে
কই'রে আদুরী? ও দুলালী? তোরা কই?
মা-বাবা ডাকছে আমাদের ডাকনামে
আমি রইলাম; আদুরী ছিটকে গিয়ে
কোথায় পড়ল কেউ জানল না কিছু
আমরা সবাই কাঁটাতার পেরোলাম
আমরা সবাই ঘাড় নীচু, মাথা নীচু
খাতা পেরোলাম ইমিগ্রেশন খাতা
লঞ্চ পেরোলাম তারপর ট্রেনপথ
কোন এক দেশে আমরা যাচ্ছিলাম
যত গেছি তত ছিঁড়ে ছিঁড়ে গেছে পথ
কোথায় সে দেশ? অতীতে? ভবিষ্যতে?


সে কোন বয়স আমরা ছেড়ে এলাম
দুলালী দুলালী, 
প্রিয়বালা প্রিয়বালা
রাস্তায় পড়ে হারিয়ে গিয়েছে নাম
খানিকটা নাম ধানখেতে পড়ে গেছে 
খানিকটা গেছে নদীজলে আঘাটায়
খানিকটা নাম নিয়ে নিল পাঠশালা
খানিকটা গেল রাস্তার কান্নায়
যে গাছের নিচে জিরোতে বসেছিলাম 
খানিকটা নাম সেই গাছটায় আছে
খানিকটা নাম মাঠের শিশির নিল 
খানিকটা গেছে রাত পড়শীর কাছে 
খানিকটা নাম বেড়ায় আটকে গেল 
খানিকটা গোঁজা রইল খড়ের পাতায়
খানিকটা নাম কাঁটাতারে তারে বেঁধা
খানিকটা যায় ইমিগ্রেশন খাতায়।

একটা বয়েস সে দেশে ছেড়ে এলাম 
একটা বয়েস নিয়ে ছেড়ে দিল স্বামী
একটা বয়েস ছেলে বড় করে শেষ
ছেলে'র নামেই আজ চেনাদি' এই আমি
ঠিকে-ঝি ছিলাম 
এখন রাত দিনের খাওয়া পড়া পাই 
এখানে ৫, সি তে
ছেলে বিয়ে করে আলাদা হয়েছে 
আমি এখানেই থাকি গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীতে।
এইখানে বসে আমি নন্দ'র মা 
ছেলেকে ভাবি না 
ভাবি না স্বামী'র-ও নাম 
শুধু মনে পড়ে আমরা যাচ্ছিলাম 
সেই কোন দেশে পালিয়ে যাচ্ছিলাম। 
---------------------------------------