.

প্রিয় কবি

অঞ্জন সরকার জিমি অমিত চক্রবর্তী অমিতাভ দাশ গুপ্ত অশোক দেব আন্দালীব আবিদ আজাদ আবুল হাসান আল মাহমুদ আলতাফ হোসেন আহসান হাবীব খোন্দকার আশরাফ হোসেন জয় গোস্বামী জীবনানন্দ দাশ টোকন ঠাকুর তানিম কবির দীপন চক্রবর্তী নবনীতা দেবসেন নির্মলেন্দু গুন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী পূর্ণেন্দু পত্রী ফয়সল রাব্বি ফারাহ সাঈদ বিনয় মজুমদার বুদ্ধদেব বসু ব্রাত্য রাইসু ভাস্কর চক্রবর্তী মজনু শাহ মন্দাক্রান্তা সেন মহাদেব সাহা মাসুদ খান মুহাম্মদ মরিয়ম মৌ ভট্টাচার্য রণজিৎ দাশ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রিফাত হাসান রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ শক্তি চট্টোপাধ্যায় শঙ্খ ঘোষ শহীদ কাদরী শোয়েব শাদাব শ্বেতা চক্রবর্তী সমর সেন সমুদ্র গুপ্ত সরকার আমিন সাইয়েদ জামিল সিকদার আমিনুল হক সুকান্ত ভট্টাচার্য সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সুনীল সাইফুল্লাহ সুবোধ সরকার সুমন রহমান হুমায়ুন আজাদ হুমায়ূন আহমেদ হেলাল হাফিজ

এই দেশে বৃষ্টি হয়

এই দেশে বৃষ্টি হয়
ব্রাত্য রাইসু

১.
এই দেশে বৃষ্টি হয়, এসব বৃষ্টির
কার্য ও কারণ নেই; আমরা অক্লান্ত জনগণ
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই বৃষ্টি দেখি, যারপরনাই
কৌতূহলহীনভরে
আমাদের নাগরিক রুচির দরজায়
বৃষ্টির পানির কোনো আবেদন, ইসথেটিক্স নেই
ব্যক্তিগতভাবে আমরা বর্ষার বিরুদ্ধে
বৃষ্টির আহলাদে মন নাচে না ময়ূর আমাদের
আমাদের অন্তর্গত ব্যুৎপত্তির কল্যাণে
উপলব্ধি করি আমরা
ওভাবে বলবার কোনো কিছু নেই:
‘অন্ধকার মধ্যদিনে বৃষ্টি ঝরে মনের মাটিতে’…
যদি বৃষ্টি ঝ’রে থাকে,
যদি সেই মৃত্তিকার দশা হয় কর্দমে পিচ্ছিল
সে-সব বলবার কোনো কথা নয়, এখনও অনেক
অনেক সমস্যা আছে, যার
সমাধান তো বহু বহু দূরের ঘটনা, নেহায়েৎ সমস্যা বলেই
প্রতিভাত হয় নি এখনও। তাই,
দরজা বন্ধ করে দিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে
শুনি বর্ষার ক্রন্দন
শুনি, কারা যেন গেয়ে যাচ্ছে আষাঢ়শ্রাবণ
আর এইসব বৃষ্টির পতনে
আমাদের নৃত্যকলা শিল্পগীত সাহিত্যদর্শন
যে যার নিজের ইচ্ছা বাপের ইচ্ছায়
বিকশিত হতে থাকে; বিকাশের নিয়ম রয়েছে—
তাই, বিকশিত হই আমরা নিয়মিতভাবে।
আমাদের নিয়ামক পছন্দ রয়েছে
বাবু রবীন্দ্রনাথের হীন বর্ষাপ্রীতি আমরা কখনও
পছন্দ করি নি, আমরা
নির্ভেজাল শুষকো থাক্তে চাই।
আমরা বুঝতেই পারি না, কী ভেবে যে রবীন্দ্রনাথ
গুণকীর্তন করতেন বর্ষার!
এখানে বৃষ্টির অন্ধকারে
সহসা সন্ত্রস্ত হয় আমাদের সাবকনশাস্!
পুরাকাল থেকে তেরছা ক্রুদ্ধ বজ্রপাত
হয় বলে মনে হয়, আমরা বিনীত জনগণ
নিমীলিত নেত্রে দেখি ভাবের জগতে
সদা বৃষ্টিপতনের
কী এক মহড়া চলছে! রুইকাতলারাঘববোয়াল
সব ভেসে উঠছে চারিধারে, বারিধারা ভেসে যাচ্ছে
মুহুর্মুহু পয়সার ঠেলায়…

২.
কোথা থেকে আসে এই নোংরা জল, পলিব্যাগ
গভীর জলের মাছ, জন্মনিরোধক? (আরো যা যা আসে আর কি)
রাশি রাশি নথিপত্র, নূহের জাহাজ
ভরা সাহায্যবহর
আসে সউদি শেখ তেলের ড্রাম বাজাতে বাজাতে
আসে বর্জ্যের কাফেলা, সব
গিলে নেন মাতা ঔদরিক।

৩.
আর বৃষ্টি হলে আমাদের ভালোই লাগে না
আর বৃষ্টি হলে ভিজে যাই আমরা সকলে
আর ভিজতে ভিজতে আমরা ক্রমশ
প্রকাশিত হতে থাকি
আমাদের মধ্যে কোনো আড়াল থাকে না, হায়
আড়ালবিহীন হয়ে কিভাবে বাঁচবো আমরা
আমাদের ব্যক্তিগত জীবন রয়েছে
ব্যক্তিগত দেহ আছে, প্রাতঃকৃত্য আছে
ব্যক্তিগত ব্যাপারে আমরা কথা বলতে একদম
পছন্দ করি না
আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার সহজ নয়, সরলতা নয়
আমাদের ব্যক্তিগত প্রত্যেক বিষয়ে
খুব মেরুদণ্ড আছে, কোনো বৃষ্টির সংশ্রব নেই
প্রকাশনা নেই
তবু কেন বৃষ্টি হয়? তবু,
এই তবু জীবনানন্দের তবু নয়;
এই তবু আমাদের উষ্মার প্রকাশ
এই তবুকে ইগনোর করে বৃষ্টি দীর্ঘ মহাকালব্যাপী
এই দেশে মহাকাল অত দীর্ঘ নয়
আমাদের মহাকাল—ব্যক্তিগত, নিজের ব্যাপার।
তাতে সময়চেতনা, কোনো ইতিহাস
অধ্যাপনা নেই, তাতে অর্থনীতির ছাত্রী বসে আছে
এ কা কি নী
জীবনের অর্থ খুঁজিতেছে
তাকে অর্থ দাও, কীর্তি দাও, সচ্ছলতা দাও
তাকে বিপন্ন বিস্ময় দাও, একদিন জোর করে
বৃষ্টিতে ভেজাও। বলো,
মহাকালে এইরূপ বৃষ্টি হয়ে থাকে।

৪.
তোমার অলক্ষ্যে যাহা বারিপাত, পতনঘটনা
তাহা নিজে নিজে বৃষ্টিপাত, নিজের রটনা
তাহা নিজের ইচ্ছায়
ইচ্ছারূপ প্রকাশিত বিশুদ্ধ অস্তিত্ব, তাহা বিশুদ্ধ ঘটনা
তাহা না-যদি ঘটিছে তবে সকলই স্থবির, সব চিরবর্তমান।
তাহা ঘটছেন বলেই, আমরা বিগতকাল আমরা গোধূলি
আমরা সদা যা চাহিছে মন অতীত অতীত
আর অতীত অতীত নহে যথাযোগ্য, যদি তাহে
না ঘটে ঘটনা, যদি নাহি বৃষ্টি নাহি গান
দিন গেল…দিন তবে যায় কি কখনও? দিন—
বসে থাকে কর্ম নেই, কোনোরূপ অপরাহ্ণ নেই;
শুধু রাত্রি শত রাত্রি আমাদেরে আচ্ছাদন ক’রে
আমরা রাত্রিতে আশ্রয় আমরা
শ্রাবণে উদ্ধার, আমরা একদিন দুইদিন যদি বৃষ্টি হলো
আমাদের দিন গেল বৃষ্টি দেখে দেখে…

৫.
আর লক্ষ্য করো মন তুমি অতীত বিষয়ে
কথা বলো, কেমন যে ভালো লাগে উতল হাওয়ার
আন্দোলন টের পাওয়া যায় যেন বৃষ্টি হচ্ছে
অন্ধকারে, ভ্রাম্যমাণ নদীর কিনারে।

৬.
আজি দিন বড়ো বৃষ্টি নাই, আজি দিন
শ্রাবণ কোথায়? কোথায় মেঘের পরে মেঘ
জমেছে, মেঘের নাহি শেষ?
শ্রবণে না পশে রিমঝিম
শ্রবণে ঘটিছে নীরবতা; হেরো মন
বিজুরিবিদ্যুৎ
ঝলকিছে আঁখির তারায়
আজি আঁখির তারায় রামধনু
আজি ঝরে পড়ো ওগো মেঘ,
বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ো দেবতা আমার
তুমি জলীয় দেবতা, তুমি বাষ্প মাত্র, তুমি মেঘ
উঁচুতে উঁচুতে
বাস করো, ভেসে যাও, ভাসার ব্যাপারে
নিতান্ত অভিজ্ঞ তুমি, আমরা গরিষ্ঠ জনগণ
অনাহারে অর্ধাহারে ভেসে যেতে চাই মেঘ
তোমার মতন; তবু
ভাসার ব্যাপারে হায়, আমাদের কিছুমাত্র
নিয়ন্ত্রণ নেই
তাই
আমাদের দিনগুলি বৃথা যায় বহিয়া পবনে…